বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন

এতিমের অর্থ লুটে খাচ্ছে আ.লীগ নেতা ও মাদ্রাসা অধ্যক্ষ

এতিমের অর্থ লুটে খাচ্ছে আ.লীগ নেতা ও মাদ্রাসা অধ্যক্ষ

স্বদেশ ডেস্ক: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচত্বরের বাবুস সালাম মাদ্রাসা মার্কেটের মালিক ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওয়াকফ প্রশাসন। ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুদানে গড়ে ওঠে পাঁচতলা ভবনটি। আয়ের অর্থ ওয়াকফ প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যয় হয় সারাদেশে এতিমদের পেছনে। ওই মার্কেটের ২০টি দোকান ও ছাদে থাকা মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারের ভাড়া লুটে নিতে বর্তমানে তৎপর দুটি গ্রুপ।

প্রভাবশালী হওয়ার কারণে সরকারি দপ্তরটি কিছু করতে পারছে না। এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ মহাপরিদর্শকের শরণাপন্ন হয়ে পুলিশি পাহারা বসিয়েছে ওয়াকফ এস্টেট। সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশি তল্লাশির মধ্য দিয়ে নামাজ আদায় করা হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, মাদ্রাসা মসজিদের সামনে ৮ পুলিশ সদস্য অবস্থান করছেন। বিমানবন্দর থানার ওসি নূরে আজম মিয়া বলেন, মার্কেটটিকে কেন্দ্র করে কয়েকটি পক্ষ বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। এতে যে কোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। মুসল্লি ও মাদ্রাসাছাত্রদের স্বার্থে আমরা নিরাপত্তা দিচ্ছি।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম এতিমের পেছনে ব্যয় হওয়া সরকারি এই সম্পত্তি দখলদারিত্বের একটি অংশের সহযোগী। সে কারণে সম্পত্তি উদ্ধারে পাহারা

বসানোর বাইরে পুলিশও নিশ্চুপ। দুই মাস ধরে মাদ্রাসা পরিচালনাকারী সাবেক ও বর্তমান বিরোধী গ্রুপসহ ওয়াকফ প্রশাসন এই তিনপক্ষ আলাদাভাবে ভাড়া দাবি করায় বিপাকে পড়ে মার্কেটের ২০টি দোকান তালাবদ্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসা মার্কেটের ভাড়া আদায় করতেন মাদ্রাসা পরিচালনাকারী সাবেক মুতওয়াল্লি সৈয়দ মুশতাক হোসেন রতন। কিন্তু দুই বছর আগে রতনকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে নতুনভাবে মার্কেটের ভাড়া আদায় শুরু করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনিছুর রহমান। তারাই ওয়াকফ প্রশাসনের নামে থাকা ইসলামী ব্যাংকের মগবাজার শাখায় সরকার নির্ধারিত হারে টাকা জমা দিতেন। তবে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা না হওয়ায় গত ২২ জানুয়ারি প্রত্যেক দোকানদারের কাছে আলাদা চিঠি পাঠিয়ে ভাড়ার টাকা দাবি করে ওয়াকফ প্রশাসন। একই সঙ্গে বকেয়া ভাড়া দাবি করা হয়। নয়তো আইনাননুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ অবস্থায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনিছুর রহমানও ভাড়া দাবি করেন, আবার সাবেক মুতওয়াল্লি ভাড়া দাবি করেন। এতে বিপাকে পড়ে পুলিশের আশ্রয় নেন ব্যবসায়ীরা।

ওয়াকফ প্রশাসনের ওই চিঠিতে বলা হয়, বিমানবন্দর জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা বাবুস সালাম ওয়াকফ এস্টেটের দায়িত্বভার গ্রহণ করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। এতএব আপনার নামীয় প্রতিষ্ঠান/দোকানের ধার্যকৃত ভাড়া বকেয়াসহ অবিলম্বে পরিশোধ করার অনুরোধ করা হলো। অভিযোগ রয়েছে, ওয়াকফ প্রশাসক কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেরা ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করে তৃতীয় পক্ষের হাতে মার্কেট তুলে দিতে তৎপর।

বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী প্রশাসক (মেট্রো-ঢাকা অঞ্চল ৩) মো. আব্দুল কুদ্দুছ আমাদের সময়কে বলেন, মাদ্রাসা, মার্কেট বা মার্কেটের মালিক ওয়াকফ প্রশাসন। এতদিন মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি ভাড়া আদায় করে আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করত। কিন্তু তারা ভাড়া না দেওয়ায় পুলিশের সহায়তায় দোকান বন্ধ করা হয়েছে। এখন পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মার্কেট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কেটের ২০টি দোকান ও চারটি মোবাইল টাওয়ার থেকে বছরে আয় ৫৬ লাখ টাকা। হজযাত্রী, প্রবাসীসহ মুসল্লিদের কাছে প্রতিমাসে দানের লাখ টাকা ওঠে। প্রতিটি দোকান থেকে জামানত হিসেবে ৬-৭ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসায় কিছু টাকা ব্যয়ের পর এ আত্মসাৎ করেন সাবেক মুতওয়াল্লি সৈয়দ মুশতাক হোসেন রতন ও বর্তমান অধ্যক্ষ মাওলানা আনিছুর রহমান। এতিমের পেছনে ব্যয়ের উদ্দেশে প্রতিষ্ঠিত ওয়াকফের এ সম্পত্তির আত্মসাৎ করা নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে বিবাদ তৈরি হয়।

এ নিয়ে গত বুধবার সাবেক মুতওয়াল্লি রতনের বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ এনে দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। মাওলানা আনিছুর রহমানের ইন্ধনে স্থানীয় কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান নাঈমের সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সৈয়দ রতনের।

সৈয়দ মুশতাক হোসেন রতন বলেন, ওয়াকফের সম্পত্তিতে কাউন্সিলর নাঈম মার্কেটের একটি দোকান দখল করে আবাসিক হোটেল বসায়। সেখানে অবৈধ কার্যকলাপ করানো হচ্ছে। আমি এর বিরোধিতা করায় কাউন্সিলরের লোকজন আমার বাসায় গিয়ে হামলা করে।

তবে আনিসুর রহমান নাঈম বলেন, রতন একটা পাগল। তার যা খুশি তা-ই বলছে। তার পক্ষে কথা বলায় এ হামলার নামে মিথ্যা কথা বলছে। আমি চাইলে তো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। হামলা করব কেন?

সাবেক মুতাওয়াল্লি ও ওয়াকফ প্রশাসন সরকারি সম্পত্তি নিশ্চিত করলেও তা অস্বীকার করছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আনিছুর রহমান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, একসময় এটা রেলওয়ের জমি ছিল, এখন মাদ্রাসার সম্পত্তি। আমরা ওয়াকফ এস্টেটকে ভাড়া দেব কেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877